শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০০৮

সমান্তরাল সহবাস

একবার মুহূর্তের জন্য গিলে ফেলেছিলাম বৃক্ষসমেত বন
কিন্তু আশ্চর্যমত পেটে গেড়ে গিয়েছিল বৃক্ষেরা
ফলত দানাদার খাদ্য অসহ্য হয়ে উঠেছিল ।
বৃক্ষেরা তরলমত খাদ্য পছন্দ করে
কিছুকাল তাই তরলখাদ্য নিতে হয়েছিল আমার।
দা-কুঠার থাকলে বৃক্ষ কর্তন এমন কঠিন কিছু নয়
মস্তিস্ক নাড়া দিয়ে উঠল আমার
তন্ন তন্ন করে বাড়ি খুজঁলাম,ওসব কিছু নেই(!)
অতঃপর গন্তব্য শৈল্যচিকিৎসক মুখলেছউদ্দীন
ডাক্টারের পেট কাটার বায়না,আমার কাঁটা ছেড়ার ভয়
বললাম পেট কেটে নয়,মুখ দিয়ে টেনে তোলেন
ডাক্টার গম্ভীর "বৃক্ষের মূল গেড়ে আছে পেটে ওটা কাটতে হবে"।
সারাটা জীবন ছায়ায় রেখেছি
আমি কি গাড়ল নাকিওটা কাঁটতে দেই
অতঃপর পাঁচশত টাকা ভিজিট এবং প্রস্থান।
বৃক্ষেরা গেড়েই থাকল ভিতরে
চেষ্টার কমতি থাকল না আমার
মাঝে মাঝে ঝড়ে বৃক্ষের পতন বিষয়ক খবর পড়ি
দস্তুরমত ঝড়ের বেগে বাতাস দেই ভিতরে
কিন্তু কি আশ্চর্যমত
কয়েকটা পাতা মাএ পড়ে ভিতরে
পচেঁ যায়পেটটা ব্যথা হয়ে থাকে কয়েকদিন
ভাবি থাকুক না বরং নিজেই অভিযোজিত হই
পৃথিবীতে আর কটা দিন?

আপনারা হয়ত এতক্ষন বুঝেই ফেলেছেন
একেকটা নারীও একেকটা বৃক্ষ বটে
যাদের গিলে ফেলা যায় সহজেই কিন্তু
উগলানো যায় না।

এতটুকু আশা নিয়েই শুধু আমি এসেছিলাম

ভরা বর্ষায় জোস্না ঝরার রাতে ছিলাম আমি একা
বজরার উপরে,গহীন হাওরে
জলের তরঙ্গে দুলে উঠছিল আমার শরীর
আমি বেতের চাটাইয়ে শুয়ে তারা গুনছিলাম।
আচমকা বৃষ্টি এসে নাড়া দিল-
জল বৃষ্টির মাখামাখি,বায়ুর সাথে মিতালী
অর্ধেক নিকোটিন হাতে নিয়ে
আমি বুঝে চলতাম জল,বৃষ্টি আর বায়ুর আচ্ছাদন।

শুধু এতটুকু আশা নিয়েই আমি এসেছিলাম
শহরের বিষাক্ত বায়ু বুকে নিয়ে আমি আসিনি কবর খুড়তে।

সবকিছু কিনে নেবে তারা

সবকিছু কিনে নেবে তারা
তোমার আমার দেশ ,দেশের মাটি
পদ্মা-মেঘনা-যমুনার মত সব নদী
কিংবা ধর তোমার বাড়ীর সামনের -
লাউগাছের মাথায় বশ করার জন্য রাখা লাউটাও।

এই যে তুমি আইজুদ্দিন রাস্তা দিয়ে হাটছ
সেটা পলাশীর সামনের নির্জন রাস্তাই হোক
অথবা মতিঝিলের সামনের রাস্তাটাই হোক না কেন
কিংবা ধরেই নও মহাখালী ক্যান্টনমেন্টের সাজানো রাস্তাগুলো
সেগুলোও কিনে নেবে তারা।
তুমি রমনা পার্কের যে বেন্চিতে বসে
তাজবিড়ির পড়ে থাকা মোতা খাও প্রতিদিন
সে বেন্চটাও কিনে নেবে তারা
যেমনটা কিনে নেবে পুরান ঢাকার
মোজাফফর আলীর দোকানের চায়ের কাপের চাটুকুও।

সবকিছু কিনে নেবে তারা
ধরে নাও তোমার বাড়ীর সামন দিয়ে
যে মেয়েটা প্রতিদিন বেনীচুল নিয়ে হেটে যায়
তার মাথায় দেয়া তেলটুকুর বোতলও।
কিনে নেবে তারা তোমার জুতা ক্ষয়ে গেলে
তুমি নীলক্ষেতের যে দোকান থেকে ছোল লাগিয়ে নাও
সে দোকানের সব জুতার খোল।
কিংবা ধর তোমার উঠটি মেয়েটা
যে দোকানে ব্রেসিয়ার কিনতে যায়
সে দোকানের সব ব্রেসিয়ারগুলো।

সবকিছু কিনে নেবে তারা
তোমার দেশের জাতীয় সংসদ,সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
রমনা পার্ক ,সের্কেটারিয়েট,প্রধানমন্তীর দপ্তর
সূধা সদন,হাওয়া ভবন,সেনা কল্যান ট্রাস্ট কিংবা ধর
পাবলিক লাইব্রেরীর যে টয়লেটগুলো তুমি প্রতিদিন
দুইবার করে ব্যবহার কর
তার দেয়ালের লেখাগুলো পর্যন্ত।

কেনে নেবে তারা তোমার গৃহিনীর হাতের কাঁকন
প্রিয় সন্তানের ব্যবহৃত স্লেট,বাড়ীর চা খাবার পেয়ালা
বিটিভির স্কীন,অফিসের বাস,রাস্তার ম্যানহোল
কিংবা তুমি যে মোজাটা
বছর দুয়েক হল বিরামহীন পড়ছ সেটাও।
কিনে নেবে তারা
তোমার দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ,পাটক্ষেতের সব সবুজ পাতা
অবুঝ কিশোরের বুকে আকড়ে থাকা বইয়ের পৃষ্ঠা
ফার্মগেটের ওভারব্রীজ,সদরঘাটের সব লন্চ ও নৌকা
এমনকি তোমার ঘরে সযত্নে রাখাকোরান শরীফের সব সূরাগুলোও।

তুমি শাহেদ জামান যে দোকানে বসে চা খাও
যে বাজারে বাজার কর
যে ব্যাংকে টাকা রাখ
অসুখের সময় যে হাসপাতালে যাও
অথবা বউয়ের হাতের বালার জন্য
বায়তুল মোকাররমের যে দোকানটায় যাও
কিংবা তোমার ছেলেটাইবা যে স্কুলে যায়
তার সবই কিনে নেবে তারা।

তুমি কেরানী আফসার আলী
যে পান্জাবী-পাজামা পড়ে অফিসে যাও
যে খুশবু শার্টে লাগিয়ে কাজ কর
মাসের শেষে পল্টনে যে মেয়েটার কাছে একবার যাও
তোমার কাজে যে কালী ব্যবহার কর
কিংবা তোমার গৃহিনী যে ডিটারজেন্টে ধোয় তোমার গন্ধ
তারও সব কিনে নেবে তারা।
তুমি ছাত্র ইরু
যে কাগজে কবিতা লেখ
কম্পিউটারের যে স্কীনে ছবি দেখ
ঘর্মাক্ত দেহে বালিশের যে কভারের উপর
মরার মত শুয়ে থাক
অথবা বাংলামোটরের জ্যামে ভিক্ষুকের থালায়
যে আধুলিগুলো ছুড়ে দাও
তারও সব কিনে নেবে তারা।

সবকিছু কিনে নেবে তারা
তোমার দেশমায়ের বুকে আজ
একাত্তরের শুয়োরদের বিষাক্ত নখর।

পতন

সজনে ডাটায় ঝুলে ছিলাম এতদিন
-ফল হয়ে
টুপ করে ঝরে যাব একদিন
ভুলেও ভাবিনি কোনদিন।

আমার প্রতিজ্ঞা

আর একবার যদি ঘৃণা কর
এই শেষবার বলে রাখলাম
কেউই রেহাই পাবেনা তোমরা
শরীরে আমার ক্যান্সার কোষ,এইডস এর জীবানু
রক্তকে দূষিত করবো আমি তোমাদের।

আর একবার যদি ঘৃণা কর
বলে রাখছি আমি শহরের বিষাক্ত বায়ুকে
স্তরে স্তরে সাজানো মৃত্তিকাকে
থরে থরে বিছানো গোলাপ আর
অদম্য উৎসাহে লালিত গৃহপালিত জন্তুদের
নিমিষে অনস্তিত্ব দেখবে তোমরা নিজেদের ।

আর একবার যদি ঘৃণা কর
কথা ছাড়াই কেড়ে নেব সব
সবুজ ধানক্ষেত ,হলুদ রঙা ধানের শীষ
চাক ভেঙে তুলে নেব মধু
গাভীর ওলান থেকে মুছে দেব দুধের গন্ধ
আদ্র্ সকালে ঘাস থেকে তুলে নেব শিশির।

আর একবার যদি ঘৃণা কর
কিছুই রেহাই দেবনা তোমাদের
চিত্রিত হরিণের গা থেকে তুলে নেব চামড়া
-জুতা বানাব
জল থেকে তুলে নেব ছায়া
দরিদ্র চিত্রকরের মতো ফেরী করব বাজারে।
ভরা পদ্মার রুপালি ইলিশ আর
গৃহপালিত পাখিদের জড়ানো তন্তু
সবই খেয়ে ফেলব নাস্তার টেবিলে
তোমাদর খাদ্যযন্ত্রের প্রতিটি উপাদান
একেকটি এঁটো হয়ে থাকবে আমার ।

অথচ আর যদি একবার ভালবাস
হাতে আমার লেবুপাতার গন্ধ
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।

যে শহরের তরুণীরা মানুষ ভেবে শবের দিকে হাত বাড়ায়

হাস্নাহেনার গন্ধ বুকে নিয়ে যারা ঘোরে এলোমেলো
এ শহরের তরুনীরা তাদের অপাক্তেয় ভাবে
শীতের সকালে ঘাসে জমানো শিশিরের ন্যায়
যাদের মধ্যে বাসা বাধেঁ ভালবাসা
এ শহরের তরুনীরা তাদের কর্পূর ভেবে দেয় উড়িয়ে
যে তরুনেরা সঙ্খের কোমল জলে খুঁজতে চেয়েছিল হৃদয়ের প্রতিচ্ছায়া
এ শহরের তরুনীরা তাদের বুক ভরে দিয়েছে বুড়িগঙ্গার কদর্য জল।

এ শহরের তরুনীরা শহরের বিষাক্ত বায়ুর মতই বিষাক্তময়
নিঃশ্বাসে হাঙ্গর ক্ষুধা,হাতে তরুন ভাঙ্গা সড়কি
আঙ্গুর সফেদা ভেবে অজান্তে ঝোঁকে মাকাল ফলে।

আমার ব্যবচ্ছেদ

আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন করে ফেল আমায়
আমার সবই নিতে পারবে তুমি
আমার চোখ-প্রদীপের শিখার মত চোখ
একুশ বছর ধরে দেখলাম তোমাদের পৃথিবী।
কন্ঠনালী,অনবরত উচ্চারন করে গেছে যা
সত্য মিথ্যার প্রথাগত উচ্চারন।
মস্তিস্কের প্রতিটি স্নায়ুকোষ যেখানে
অক্লেশে সরল-কুটিল চক্রান্তের জাল হয়েছে বোনা।
নিতে পারবে আমার নিয়তযত্নে শ্যাম্পু মাখানো কালো কেশ
মেরুদন্ড যেটাকে কখনই দাড়াতে দিতে পারিনি
আমার না খেতে পাওয়া শুকনো পাকস্থলী,
ফুসফুস- যেখানে অবিরাম সন্চালিত হচ্ছে বায়ুপ্রবাহ
এমনকি আমার হাত ও পায়ের অঙ্গুলিও
এখনও যেগুলোতে লেগে আছে সামান্য অশৌচ।
আমার সবই খুলে নিতে পারবে তুমি শুধু-
কেবলমাত্র আমার হৃপিন্ডটা ছাড়া
কেননা হৃদয়টা এখন আর আমার দখলে নয়-
হৃদয়টা এখন অন্য কারো,কোন এক নারীর।

জীবন

জীবন যেন একখানি জলন্ত দেশলাই
জন্ম অদম্য উৎসাহে,রারুদের মত বিস্ফোরনে
পোড়ে অবিরাম দ্রুত কিংবা ধীরে,পোড়ায় নিজেকে
পোড়ে যেমন দেশলাইয়ের কাঠি
দ্রুত কিংবা ধীরে
সবটা পুড়ে গেলে হাতকে পোড়ায়
মানুষও শব হয়ে কাউকে কাদায়।