রবিবার, ২৫ মে, ২০০৮

একটি খুনের স্বপ্ন : : অনেকদিন আগে পড়া একটি বই নিয়ে গল্প

সেদিন একজনের সাথে কথা হল । তিনি আমাকে বললেন গল্প -উপন্যাসের প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই । সবই নাকি ফ্যান্টাসি লাগে । পড়তে ধরলেই নাকি মনে হয় এসবের কিছুই কখনো বাস্তবে হয় নি , বিশ্বাস করার কোন কারন নেই । গল্প নিছক গল্পই । আর আগ্রহ পান না পড়ার । এসব আর কি?

পরে আমি ওনার কথাগুলো নিয়ে ভাবতে থাকি । আসলেই কি এগুলো ফ্যান্টাসি ? বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে কি অত্যধিক মাত্রায় অনুভূতিপ্রবণও নয় । এরকম ভাবতে পারলে হয়ত সামান্য কিছু লাভ হতে পারত , অন্তত আমার ক্ষেত্রে । কিছু কিছু বই পড়ে যন্ত্রনাও পেতে হয় । যন্ত্রনাটা প্রখর হয়ে ওঠে যখন সেটা সাময়িক মানে দু -এক ঘন্টা না স্থায়ী না হয়ে কয়েকদিনব্যাপি স্থায়ী হয় । আজকে আমি সেরকম একটা বই পড়া বিষয়ক যন্ত্রনার কথাই বলব।

আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি । হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে চারিদিকে প্রচুর হইচই হচ্ছে । আমিও এই হইচইয়ে যোগ দেই । নীলক্ষেত থেকে আজাদের যত বই আছে একে একে কিনে পড়ে ফেলতে থাকি । ওনার কবিতাগুলো ভাল লাগতে থাকে , মুগ্ধ পাঠক হয়ে উঠতে থাকি ওনার কবিতার । কিন্তু উপন্যাস যে দু একটা পড়ি (শ্রাবনের বৃষ্টিতে রক্তজবা , ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ ) এগুলোকে একঘেয়ে মনে হয় । কেমন জানি উপমার বাহুল্যতা আর গায়ে পড়ে অশ্লীল কথাবার্তা শোনানোর মত মনে হয় উপন্যাসগুলো । কিছুতেই টানতে পারে না উপন্যাসগুলো ।

আজাদের উপন্যাস কিনবনা কিনবনা করেও একদিন আরেকটি কিনে ফেলি ," একটি খুনের স্বপ্ন" । একশো বিশ বাইশ পৃষ্ঠার ছোট একটি বই , ভালমত পড়তে তিন -চার ঘন্টার বেশী লাগার কথা না । উপন্যাসের ঘটনা তারচেয়েও সামান্য । সহজভাবে বলতে গেলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের প্রেম কাহিনীর বর্ণনা । কিন্তু আজাদের হাতে এই সামান্য কাহিনীই অসামান্য হতে শুরু করে । প্রেমিকা সুফিয়ার জন্য নায়কের অনূভূতি , তাকে পাওয়ার আকুলতা সর্বোপরি নায়কের স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রেমিকার উপস্থিতি এবং তৎসংলগ্ন প্রভাবের বর্ণনা পড়ে আমি মুগ্ধ হতে থাকি । অনবরত বলতে থাকা উপমাগুলোকে আর অস্বাভাবিক বলে মনে হয় না ।

বইয়ের অর্ধেক অংশজুড়ে এই রোমান্টিসিজমের পর ঘটনা একটু অন্যদিকে মোড় নেয়া শুরু করে । স্বাভাবিক পাঠকমাত্রই বুঝতে পারছেন বিচ্ছেদ হবে আরকি ? কিন্তু আজাদ এই বিচ্ছেদের বর্ণনাটা দেন একটু অন্যভাবে ।
তোফাজ্জল নামক এক কথিত ভাইয়ের সাথে নায়ক পরিচয় করিয়ে দেয় প্রেমিকার । ধীরে ধীরে তোফাজ্জল চর্তুপাশ ঘিরে উঠতে থাকে সুফিয়ার । নায়কের অজান্তে যায় সুফিয়ার বাসায় , নানান ধরনের উপহার দিতে থাকে সময়ে অসময়ে । তোফাজ্জল আর সুফিয়ার মধ্যে গড়ে উঠতে থাকে আরেকটি সম্পর্ক । নায়কের বুঝতে প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও একদিন সে সরাসরি বুঝতে পারে । বুঝতে পারে একদিন সকালে তোফাজ্জলের বাসায় । আজাদের বর্ণনা অনুযায়ী
উদ্ধৃতি
আমি নিঃশব্দে ভিতরে ঢুকে প্রথমে অন্ধ হয়ে যাই , তারপর আমার চোখে আলো জ্বলে ওঠে , অন্ধকার থেকেও যা উজ্জ্বল , মহাবিশ্ব ভেঙে পড়ার পর দেখা যাবে যে -আলো ,আমি তাদের কাছে এগিয়ে যাই ; বিকট সিল মাছের মত কালো নগ্ন তোফাজ্জল ভাইয়ের আবর্জনাস্তূপের মতো দেহের ওপর একটি পা রেখে নগ্ন সুফিয়া ঘুমিয়ে আছে , সিলটি পড়ে আছে লাশের মত সুফিয়ার মুখটি পূর্ণিমার চাঁদের মতো জ্বলছে , সরস্বতী ও অসুর জড়িয়ে আছে একে অন্যকে , দুজনেই গভীর ঘুমে নিমজ্জিত , হয়ত একাধিক সঙ্গমের তারা ক্লান্ত সুখনিদ্রায় লুপ্ত হয়ে আছে , জেগে উঠে আবার সঙ্গম করবে পশু ও সুন্দরী ।

এরপর নায়ক একটি খুনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে , যা সে দেখতে পায় স্বপ্নে । প্রথমে সে বিব্রত বোধ করা শুরু করে ভয়ও পায় খানিকটা কিন্তু পরে সে এটাকে একটা অর্পিত দায়িত্ব ভাবা শুরু করে যেন অবশ্যই পালন করতে হবে । নায়কের মাথায় একটি স্বপ্ন জেগে থাকে - একটি খুনের স্বপ্ন ।

আমি উপন্যাসটি পড়া শেষ করি । আমার প্রচন্ড আক্রোশ তৈরী হতে শুরু করে তোফাজ্জলের উপর , সুফিয়ার উপর। কিছুই ভাল লাগে না । আমি বারবার নিজেকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করি আরে এটাতো সামান্য একটা উপন্যাসই , লেখকের মনে হয়েছে লেখক লিখেছে । কিন্তু সান্ত্বনায় কোন কাজ হয়না । আমি বারবার ভুলে যেতে থাকি এটা একটা উপন্যাস । আমার মনে হতে থাকে নায়কের চরিত্রে আমি দাড়িয়ে আছি । নগ্ন সুফিয়া সামগ্রিক ঐশ্বরিক সৌন্দর্য নিয়ে বাহুবন্ধনে পড়ে আছে তোফাজ্জলের । আমার রাগ বাড়তে থাকে । রাগ বাড়তে থাকে তোফাজ্জলের উপর , রাগ বাড়তে থাকে সুফিয়ার উপরও । আমি পলাশী বাজারে যাই , চা খাই । সেসময় সিগারেট খেতাম না কিন্তু সিগারেটও ধরাই একটা । একটা যন্ত্রনা আমার মাথার মধ্যে কাজ করে । আমি যন্ত্রনাটাকে সরাতে চেষ্টা করি কিন্তু এটা মাথার মধ্যে গেড়ে থাকে আরো দু তিনদিন । অজান্তে আমিও একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি , নিতান্ত ছেলেমানুষি স্বপ্ন - একটি খুনের স্বপ্ন ।(এটা লেখাটা নিতান্ত মাত্রাতিরিক্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয় , পাঠকদের বলে নিলাম । বই পড়ার মধ্যে যে একটা যন্ত্রনা আছে সেটা সেই কয়েকদিন বুঝেছিলাম )

শুক্রবার, ২ মে, ২০০৮

দূরত্ব

রাতুলের বাবার কথা :

রাতুল ওর একটা নিজস্ব জগত তৈরি করে নিয়েছে । এখানে খুব একটা লোকজন নেই , আমি আর ওর মা তো মনে হয় নেইই । রাতুল আমাদের মন খুলে কিছু বলে না । আমরা যে কোন কিছু সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে হা-না বলে চালিয়ে নেয় , পারতপক্ষে কথা বলতেই যেন ওর আপত্তি । রাতুলের ব্যাপারে কোন কিছু জানার দরকার হলে প্রথমে আমি ওর মার কাছে জানতে চাই । আমার মনে হয় মার কাছে হয়ত এ বিষয়ে ও বলবে কিন্তু খুবই হতাশ হই যখন জানতে পারি ওর মা ও এ বিষয়ে কিছু জানে না ।আমি বুঝতে পারি ওর সাথে একটা দূরত্ব তৈরী হয়েছে। দূরত্ব সৃষ্টির ব্যাপারটা এমন যেটা একবার তৈরী হয়ে গেলে সহজে ভাঙা যায়না ,বিশেষত ও যখন আঠারো বছরের তরুন , কলেজে পড়ে । মাঝে মাঝে আমি রাতুলের সাথে আমাদের এই দূরত্ব সৃষ্টির ব্যাপারটা নিয়ে ভাবি , খুঁজে বের করার চেষ্টা করি কোথা থেকে এই দূরত্বটা সৃষ্টি হল । ওর মাকেও বলি বিষয়টা । সে বলে না কোথায় দূরত্ব তৈরী হয়েছে , ঠিকই তো আছে সবকিছু । কিন্তু আমি জানি এটা ওর মনের কথা না , মায়েরা কখনোই মনে করেনা সন্তান একটু দূরে সরে গেছে । আমার মনে হয় দূরত্ব সৃষ্টির এই ব্যাপারটা তৈরী হয়েছে ওকে কম সময় দেয়াকে কেন্দ্র করেই । আমরা স্বামী -স্ত্রী দুজনেই সরকারী চাকুরী করি , নয়টা পাঁচটা অফিস সেরে ওকে সেভাবে সময় দেয়া হয়নি। এসময়টা ও হয়ত স্কুলে গিয়েছে অথবা একা একা বাসায় থেকেছে । অফিস থেকে একটু শহরে ঘুরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যখন দেখতাম ও অসময়ে টিভি দেখছে তখন আমার মেজাজ একটু খারাপ হত । ও হয়ত ব্যাপারটা বুঝতে পারত । আমি আসলেই টিভি বন্ধ করে পড়ার টেবিলে চলে যেত । পড়ালেখায় বরাবরই ভালো থাকার কারনে আমি কিছু বলতাম না । আমার সাথে বরাবরই ওর কথা হত কম । ও মূলত আমার সাথে কথা বলত টাকার ব্যাপারে । শুধুমাত্র স্কুলের বেতন বা ব্যাচে প্রাইভেট পড়ার জন্য টাকার দরকার হলে আমার কাছে টাকা চাইত , হাত খরচের টাকা পর্যন্ত চাইত না । ক্লাস ফাইভে এইটে বৃত্তি পেয়েছিলো । ওই টাকা দিয়েই হাতখরচ চালাত মনে হয় । এখন আমার মনে হয় কিছু কিছু জিনিস ভুল হয়ে গেছে । ওকে পুরোপুরি ওর মত থাকতে না দিয়ে সময়ে অসময়ে একটু কথা বলা উচিত ছিল আমার । হয়ত ও যখন টিভি দেখছিল তখন গিয়ে এর পড়ালেখার খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল , স্কুলের কোন স্যার কেমন , সামনে ওর জন্মদিনে বন্ধুবান্ধবদের ও বাসায় দাওয়াত দিতে চায় কিনা এসব হাল্কা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল । মফস্বল শহরে ছেলেদের দল বেঁধে খেলাধুলা করতে দেখি বিকেলে । রাতুল ওসবে গিয়েছেও খুব কম । অবশ্য আমারও এখানে একটা দোষ ছিল আমিই যেতে দেইনি। কত খারাপ ছেলেই তো আছে কার সাথে মিশে কখন কোন পথে যায় । এখন বুঝতে পারি ব্যাপারটা খুব একটা ভাল হয়নি । ওর বয়সের ছেলেদের সাথে ওর মেশা উচিত ছিল , ভালোভাবেই মেশা উচিত ছিল । এতে হয়ত আমাদের সাথে ওর কথাবলার জড়তাটুকু কেটে যেত ।

\

রাতুলের মার কথা :
রাতুলের বাবা মাঝে মাঝে আমার কাছে রাতুলের নানান বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে । আমি উত্তর দিতে পারিনা । ওর সাথে আমার কথাই হয় কম । বাসায় থাকলে হয় ও পড়াশুনা করে নাহয় টিভি দেখে । অফিসের অনেকের কাছে শুনি তাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করতে চায় না , নানান বায়ানাক্কা করে । কিন্তু রাতুলকে কখনও পড়াশুনার কথা বলতে হয়নি । হাইস্কুলে থাকার সময়েও ও খাওয়া , ঘুম , স্কুল , স্যারদের কাছে ব্যাচে পড়তে যাওয়া খুবই নিয়মমত প্রায় রুটিনমাফিক করত । আমি আশ্চর্য হতাম এত কম বয়স থেকে এই ছেলে এরকম নিয়মকানুন শিখল কোথা থেকে । আমারও ওর এ বিষয়গুলো ভাল লাগত , তাই আমিও ওকে ওর মত থাকতে দিতাম । রাতুলের বাবা মাঝে মাঝে বলে ওর সাথে নাকি আমাদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে । আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারি কিন্তু হেসে উড়িয়ে দেই , আমিও সায় দিলে লোকটা হয়ত মনে মনে কষ্ট পাবে । যদিও আমিও জানি রাতুলের সাথে আমাদের আসলেই একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে ।

রাতুলের কথা:
কলেজে অনেকে আমাকে মেশিনম্যান নামে ডাকে । একবার আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম মেশিনম্যান কি ? সে হেসে জবাব দিয়েছিল যন্ত্রমানব । আমি বুঝতে পারিনি কেন ওরা আমাকে এ নামে ডাকে । অনেকদিন পর একজন আমাকে বলেছিল আমি নাকি যন্ত্রের মত রুটিনমাফিক সবকিছু করি । নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে আসি , নির্দিষ্ট সময়ে কলেজ থেকে ফিরি ,যন্ত্রের মত স্যারদের লেকচার তুলি পাশের ছাত্রের সাথে কোন কথা না বলেই, অন্যদের সাথে কথাও বলি মেপে মেপে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বলতে চাই না । ওরা হয়ত ঠিকই বলে , নির্দিষ্ট একটা রুটিনের বাহিরে কেমন যেন এলোমেলো লাগে আমার । আগে মফস্বলে বাসায় থাকতেও এটা করতাম এখন ঢাকায় কলেজে পড়তে এসেও এটা করি । বাসায় থাকতে আম্মা পছন্দ করতেন এটা । পাশের বাসাতে গিয়ে গল্প করতেন আমাকে নিয়ে , রাতুল তো পুরো রুটিনমাফিক চলে , রুটিনের বাহিরে একপা ও যেতে চায় না । বাসায় আমার তেমন কিছু করার ছিল না । অনেকের বাসায় ভাইবোন থাকে একসাথে সবাই মিলে হল্লা করতে পারে কিন্তু আমাদের বাসায় দিনের বেলায় বলতে গেলে লোক থাকত দুইজন । একজন আমি আর একজন কাজের বুয়া । বুয়ারা অধিকাংশই থাকত দেশ থেকে আনা স্বামী পরিত্যক্তা বয়স্কা মহিলা । এরা বাসায় থাকার পরিবর্তে হাতের কাজ সেরে পাশের বাড়ীতে গিয়ে গল্পগুজবেই ব্যস্ত থাকত । ফলে অধিকাংশ সময়েই খালি বাসায় একলা থাকতে হত আমার । স্কুলে গিয়ে আমি শুনতাম ক্লাসের ছেলেরা নানান বিষয়ে আলাপ করত । সরকারী কলেজে একটা বড় পুকুর ছিল ওখানে ভরদুপুরে সাতরাত ওরা , বিভিন্ন এলাকায় দল বেঁধে ক্রিকেট খেলতে যেত , অখিলবাবুর বড় আমবাগানে চুরি করে খেত লিচু, নারকেল ,আম ইত্যাদি । আমি ওদের কখনো যেতাম না , বলা যেতে পারে যেতে ভয় পেতাম যদি আব্বা জানতে পারে। একবার ক্লাস সিক্সে থাকতে আমি কলেজের বড় মাঠটাতে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলাম বাসার কাজের বুয়াকে না বলে । আব্বা কি জানি কাজে অফিস থেকে বাসায় এসে আমাকে না পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মাঠে । বাসায় ফিরে রান্নাকরার একটা কন্চি দিয়ে মেরেছিলেন খুব । বাসায় আম্মা ছিলেন না । আমাকে উদ্ধার করতে কেউ আসেনি সেদিন। আমার সাথে সেদিন যারা মাঠে খেলছিল ওরা আমাকে আব্বা মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন দেখে খুব অবাক হয়েছিল , সম্ভবত ভয়ও পেয়েছিলো একটু । আমাকে আর কখনও খেলতে ডাকেনি ওরা। সেই থেকে আব্বাকে আমি প্রচন্ড রকম ভয় পাই । পারতপক্ষে পরতে চাইনা আব্বার সামনে । আব্বাও দেখি আমার সাথে কথা বলেন কম । অন্য বাবারা দেখতাম আমার বাবার থেকে আলাদা । ঈদের নামাজে ছেলেদের একসাথে নিয়ে যান , মেলা টেলায়ও নিয়ে যান নিয়ম করে । অথচ আমি ঈদের নামাজে যেতাম পাশের বাসার বদরুল ভাইয়ের সাথে , মেলার সময় আমার হাতে বাবা গুজে দিতেন বিশ টাকার একটা নোট । আমি ভাবতাম বাবা এমন কেন ? কিন্তু আমার বোধ একদিন পাল্টে । ঢাকায় পড়তে আসার সময় আব্বা আমার সামনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন । আমি অবাক হয়ে যাই , এতটা ভালবাসা আব্বা কোথায় রেখেছিলেন এতদিন । মানুষ কতভাবে নিজেকে খোলসের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে ভাবতে থাকি আমি । ছুটিছাটায় বাড়িতে গেলে সবাই নাকি আব্বা-আম্মা -ভাইবোনের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেয় । ঢাকায় এসে গল্প করে মেসে । আমি পারিনা ওদের গল্পে অংশগ্রহন করতে। বাসায় গেলে আব্বা আমাকে কিছু গতানুগতিক প্রশ্ন করেন আমিও হা-না করে উত্তর দিতে থাকি । আমি জানি আমার সাথে পিতামাতার একটা দূরত্ব আছে , আমি ভাঙতে চেষ্টা করি দূরত্বটা , পারি না।